বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরানো নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই ভিনরাজ্য থেকে শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এর ফলে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এর দায় কে নেবে? পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। এ ছাড়া এদিন ফের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও।
বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারকে রীতিমতো আক্রমণ করে বলেন, ‘রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই রেল মন্ত্রক পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে পাঠিয়ে দিচ্ছে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৫ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক চলে এসেছেন। তাঁদের অনেকেই সংক্রমিত। এর ফলে রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। এর দায় কে নেবে? হঠাৎ শুনলাম, একসঙ্গে ৩৬টি ট্রেন মহারাষ্ট্র থেকে ছাড়া হচ্ছে। রেলের কি কোনও দায়িত্বই নেই?’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, সংক্রমণ ঠেকাতে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করুন।’ মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, দিল্লি এবং তামিলনাড়ু —এই ৫ রাজ্যের নাম করে তিনি বলেন, ‘এই রাজ্যগুলি থেকে পরিযায়ীরা এলেই ইনস্টিটিউশন কোয়ারেন্টাইন করা হবে।’
পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পরেই তাঁর সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী। দিলীপ ঘোষ এদিন বলেন, ‘বাংলার বিপদের জন্য দায়ী মুখমন্ত্রীর রাজনীতিই। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আগেই কেন সরকারি কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়নি? হতেই পারে তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্য থেকেই যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তা দেখাতে চাইছেন। যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর সব দোষ চাপিয়ে দেওয়া যায়।’ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, ‘রাজ্যের শ্রমিকরা রাজ্যে ফিরে আসছেন। তাতে অন্যায় কোথায়? আসল কথা হল, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কোনও উদ্যোগ ছিল না। পরে বাধ্য হয়ে তাঁদের ফেরাতে হচ্ছে। এখন মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কোয়ারেন্টাইনের কথা বলছেন। কিন্তু আগেই কেন স্কুলগুলিতে পরিযায়ীদের জন্য কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়নি?’
এদিন ফের তিনটি টুইট করে মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি নিশানা করে লিখেছেন, ‘এখন সংবাদ মাধ্যমে লম্বা–চওড়া কথা বলার সময় নয়। আটদিন হয়ে গেল আমফান চলে গিয়েছে। কিন্তু এখনও শহর, শহরতলি–সহ বহু জায়গায় জল নেই, বিদ্যুৎ নেই। এই সময় জল, বিদ্যু এবং অন্য জরুরি পরিষেবাগুলি যাতে স্বাভাবিক হয়, সেই কাজটা করুন। দুর্গত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দিন।’ পাশাপাশি তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে এই পরামর্শও দিয়েছেন, ‘এই পরিস্থিতিতে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো বন্ধ করুন।’ রাজ্যপালের এই মন্তব্যের পাল্টা কোনও মন্তব্য এদিন কোনও তৃণমূল নেতা বা মন্ত্রীর মুখে শোনা যায়নি।